Saturday, March 12, 2016

Sthanio Sorkar o Narir/ স্থানীয় সরকার ও নারী


প্রথম অধ্যায়

১.১ ভূমিকা :
আধুনিক গণহতন্ত্রের মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের সর্বস্তরে জনগণের অংশগ্রহণ। আজকের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের যুগে এর অর্থ হচ্ছে প্রশাসনের সর্বস্তরে নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনপ্রিতিনিধিগণতই মূখ্য ভূমিকা পালন করবেন। রাষ্ট্রের উদ্ভবের পর থেকেই লক্ষ্য করা গেছে যে, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে কেন্দ্রীভূত করে রাখাটাই হচ্ছে প্রধানত প্রবণতা। কিন্তু জনগণের আকাঙ্খার বিস্তৃতির সাথে সাথে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বার্থে রাষ্ট্রীয়, প্রশাসনের আরো অধিকতর জনসম্পৃক্তির জন্য বর্তমান যুগে প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। বিকেন্দ্রীকরণ হলো কর্তৃক ও ক্ষমতা স্থানীয় পর্যায়ের সরকারগুলোর নিকট হস্তান্তর করা। এ প্রসঙ্গে জড়হফরহবষর এর সংজ্ঞা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ঞৎধহংভবৎ ড়ভ ধঁঃযড়ৎরঃু ঃড় ঢ়ষধহ, সধশব ফবপরংরড়হ ধহফ সধহধমব ঢ়ঁনষরপ ভঁহপঃরড়হং ভৎড়স ঃযব হধঃরড়হধষ ষবাবষ ঃড় ষড়পধষ ষবাবষং” রনডিনেলী বিকেন্দ্রীকরণকে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি ধারা হিসবে গণ্য করেছেন।

প্রথমত, স্থানীয় স্ব-শাসিত সরকারকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা প্রদান, একে পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি প্রভাব ও কর্তৃত্ব থেকে স্থানীয় স্ব-শাসিত সরকারকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখা।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য নির্দিষ্ট এবং আইনগতভাবে স্বীকৃত ভৌগলিক সীমারেখা চিহ্নিত করা, যার উপর এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।

তৃতীয়ত, স্থানীয় স্ব-শাসিত সরকারকে তার উপর আরোপিত নির্দিষ্ট কার্যাবলির পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসম্পদ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের ক্ষমতা প্রদান করা।

চতুর্থত, ক্ষমতা হস্তান্তরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, এ প্রক্রিয়ার অধীনে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্থানীয় জনগণের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং এসব প্রতিষ্ঠানের উপর স্থানীয় জনগণের কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয়া।



১.২ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ঃ

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার হলো সেই সরকার যা কেন্দ্রী সরকারের নিযুক্ত কর্মকর্তা দ্বারা নয়, এলাকায় জনসাধারণ দ্বারা প্রত্যক্ষ অথবা  পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত অথবা সরকার কর্তৃক মনোনীত স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দ্বারা পরিচালিত। এক কথায়- স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন হলো জনপ্রতিনিধিদের শাসন। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় সরকারী কর্মকর্তাদের ভূমিকা গৌণ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাই মূখ্য। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন  সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

ওহফরধ ংঃধঃবঃড়ৎু পড়সসরংংরড়হ (১৯৩০,ঠড়ষ-১, চধমব-২৯৮) – এ রিপোর্ট অনুসারে স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসিত সরকারের অর্থ - “একটি স্থানীয় প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন, যা স্থানীয় নির্বাচকদের নিকট দায়ী, যে ব্যবস্থা পরিচালনার আইন, শাসন, এমনকি নিজস্ব তহবিল সৃষ্টির মানসে এলাকার জনসাধারণের উপর করারোপ করতে পারে এবং দায়িত্ব পলন ও সরকারের সামঞ্জস্য বিধানে একটি প্রশিক্ষণাগার হিসাবে কাজ করে।”

ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ড়ভ ইৎরঃধহহরধ -গ্রন্থের (ঠড়ষ-১৪, চধমব-১৭৯) – বলা হয়েছে- “স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এবং স্বীয় প্রক্রিয়ায় পরিচালিত।”

জনক্লার্ক- এর মতে, “স্থানীয় স্ব-শাসিত সরকার জাতীয় অথবা প্রাদেশিক সরকারের সেই অংশ, যা শুধু সেই কাজই করে যা স্থানীয় জনসাধারণের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কাজের জন্য দায়ী থাকে।”

জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, “স্থানীয় স্ব-শাসিত সরকার বলতে জাতীয় অথবা প্রাদেশিক সরকারের রাজনৈতিক বিভাগ বা উপ-বিভাগকে বোঝায়, যা আইনের দ্বারা সৃষ্টি, স্থানীয় ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ বিস্তার এবং প্রয়োজনবোধে করারোপ করতে পারে। ইহা নির্বাচিত অথবা মনোনীত হতে পারে।”

আকপানের মতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মূল বিষয় হল এটা স্থানীয় একটি সরকার ব্যবস্থা এবং তার স্বায়ত্তশাসন আছে।

সুতরাং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন হলো- সেই সরকার যা স্থানীয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত কেন্দ্র বা প্রদেশের কোন এজেন্ট নয়, এ সরকারের করারোপ এবং স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।



দ্বিতীয় অধ্যায়

বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের অংশসমূহ :

১। ইউনিয়ন পরিষদ,  ২। উপজেলা পরিষদ,  ৩। পৌরসভা, ৪। সিটি কর্পোরেশন

১। ইউনিয়ন পরিষদ ঃ

১৯৯৭ সালে ১লা সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে “স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (২য় সংশোধনী)” বিল পাশ করা হয়। কমিশন ইউনিয়ন পরিষদকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করেন। এ প্রেক্ষিতে কমিশন ইউনিয়ন পরিষদের গঠন কার্যাবলি এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ করেন। যা ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করবে।


ইউনিয়ন পরিষদের গঠন প্রণালি ঃ

ইউনিয়ন পরিষদে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। তিনি ইউনিয়নে বসবাসরত প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি ইউনিয়নকে ৩ি ওয়ার্ডের পরিবর্তে ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। এ নয়টি ওয়ার্ড থেকে ৯জন সদস্য ইউনিয়নে বসবাসরত প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন এবং সংরক্ষিত আসনে ৩ জন মহিলা সদস্য জনগণের ভোটে নির্বাতি হবেন। সর্বোমোট ১৩ জন সদস্য (একজন চেয়ারম্যান, ৯জন পুরুষ সদস্য ও ৩ জন মহিলা সদস্য) নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হবে। এ ছাড়া সাব এসিস্ট্যান্ট কৃষি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকার, স্থানীয় আনসার ও ভি.ডি.পির প্রধান এবং মাঠ পর্যায়ে সরকারের নিযুক্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মীগণ পদাধিকার বলে সদস্য বলে বিবেচিত হবেন। ইউনিয়ন পরিষদে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের কোন ভোটাধিকার থাকবে না। তা ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সমবায় কর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী / পশ্চাদপদ গোষ্ঠী  (যেমন- তাতী, জেলে, ভূমিহীন, কৃষক, কর্মী, বঞ্চিত নারী) কোন ভোটাধিকার বিহীন সদস্য থাকবে না।


ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলি ঃ

ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলিকে নি¤েœাক্ত ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

ক) নাগরিক কার্যাবলি ঃ যেমন- যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, পানীয় জল সরবরাহ এবং সাংস্কৃতিক ও সমাজ কল্যাণ।

খ) রাজস্ব ও প্রশাসন ঃ যেমন- রাজস্ব ও প্রমাসন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদেরকে সহায়তা করা, রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড ও তালিকা প্রণয়ন করা, সার্ভে বা শস্য পরিদর্শন, ঋণ আদায় করা, অপরাদ দমন করা ইত্যাদি।

গ) নিরাপত্তা ঃ যেমন চৌকিদার ও দফাদার দ্বারা গ্রামের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।

ঘ) উন্নয়ন ঃ যেমন- কৃষি ও কুটির শিল্পের উন্নতি, বন, পশু ও মৎস সম্পদ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।


ইউনিয়ন পরিষদের কমিটি ব্যবস্থা ঃ

১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশের ৩৮ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ইউনিয়ন পরিষদ প্রয়োজনবোধে কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমোদন সাপেক্ষে যে কোন কমিটি বা সাব কমিটি গঠন করতে পারে এবং কমিটি বা সাব –কমিটি সে কাজই করবে যা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত হবে। ১৯৯৩ সনের (সংশোধনী) আইনে নি¤েœাক্ত ৭টি স্ট্যান্ডিং কমিটি  গঠনের বিধান রাখা হয়েছে ঃ

ক) অর্থ ও সংস্থাপন,

খ) শিক্ষা,

গ) স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, মহামারী নিয়ন্ত্রণ এবং পয়ঃপ্রণালী,

ঘ) নিরীক্ষা ও হিসাব,

ঙ) কৃষি ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ,

চ) সমাজ কল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার ও

ছ) কুটির শিল্প ও সমবায়।

এ ছাড়াও জেলা প্রশাসকের পূর্ব অনুমোদন সাপেক্ষে ইউনিয়ন পরিষদ কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পন্থায় অতিরিক্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করতে পারবে।

স্ট্যান্ডিং কমিটি এর সদস্যদের একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্ধারিত করবেন।

ইউনিয়ন পরিষদ এর স্ট্যান্ডিং কমিটিতে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিকে সংযোজিত সদস্য হিসেবে নিতে পারবে। কিন্তু এ ধরনের সংযোজিত সদস্যদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় ভোটাধিকার থাকবে না। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের আগের সাতটি স্ট্যান্ডিং কমিটির অতিরিক্ত আরো পাঁচটি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২। উপজেলা পরিষদঃ

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। বিশেষত গ্রাম বাংলার উন্নতির জন্য তিন স্তর বিশিষ্ট গ্রাম স্বায়ত্তশাসনের দ্বিতীয় স্তরে অর্থাৎ, থানা পর্যায়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। স্বাধীনতার পর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার পাকিস্তান আমলে মৌলিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীন প্রবর্তিত গ্রাম এলকার জন্য চার স্তর বিশিষ্ট (ইউনিয়ন কাউন্সিল, থানা কাউন্সিল, জেলা কাউন্সিল ও বিভাগীয় কাউন্সিল) স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করেন। অতঃপর সরকার, ১৯৭২ সালের ২ শে এপ্রিল এক ঘোষণা বলে প্রাক্তন থানা কাউন্সিলের নাম পরিবর্তন করে থানা উন্নয়ন কমিটি নামে সংস্থাটি চালূ করেন। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলি এবং থানার উন্নয়নমূলক কাজ তদারক করাই ছিল থানা উন্নয়ন কমিটির প্রদান দায়িত্ব। এ ব্যবস্থা ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। ১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন অধ্যাদেশ বলে থানা পর্যায়ে থানা পরিষদ গঠন করা হয়। এর পর থানা পর্যায়ে নেতৃত্বের বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালের মে মাসে এক ঘোষণা বলে সরকার থানা পরিষদের পাশাপাশি থানা উন্নয়ন কমিটি গঠন করেন। পরে অবশ্য এ অপ্রয়োজনীয় সংস্থাটি বাতিল (১৯৮২ সাল) করা হয়।

১৯৮২ সালে রাষ্ট্র পতি এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণ নীতি প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার পুনর্গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে সরকার ১৯৮২ সালের ২৮ শে এপ্রিল একটি প্রশাসনিক পুনবিন্যাস কমিটি গঠন করেন। এ কমিটির প্রচলিত প্রশাসন ব্যবস্থার পুর্নগঠন করে থানা ভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে মত দেন। কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সরকার থানা পরিষদ ও থানা প্রশাসন পুনর্গঠন অধ্যাদেশ-১৯৮২ জারী করেন। এর দ্বারা সরকার চিহ্নিত করেন। পরে ১৯৮৩ সালে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনিক পুনর্গঠন (তৃতীয় সংশোধনী) অধ্যাদেশ-১৯৮৩ জারী করেন। এ অধ্যাদেশের বিধান মতে উন্নীত থানার নামকরণ করা হয় উপজেলা এবং এদের প্রত্যেকটির জন্য একটি উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থা করা হয়।

এক নজরে ঃ থানা কাউন্সিল (১৯৫৯), থানা উন্নয়ন কমিটি (১৯৭২), থানা পরিষদ(১৯৭৬), থানা উন্নয়ন কমিটি (১৯৮২), মান উন্নীত থানা (১৯৮২), উপজেলা (১৯৮৩)।

উপজেলা পরিষদের গঠন ঃ

উপজেলা পরিষদ নি¤েœক্ত ছয় ধরনের সদস্যের সমবায়ে গঠিত ঃ

১। নির্বাচিত চেয়ারম্যান ঃ উপজেলা পরিষদের সর্বোচ্চ স্থানের অধিকারী হবেন জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান।

২। প্রতিনিধি সদস্য ঃ সংশ্লিষ্ট উপজেলার অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যানগণ পরিষদের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।

৩। মহিলা সদস্য  ঃ উপজেলার মহিলা অধিবাসীদের মধ্য হতে ৩ জন মহিলা সদস্য সরকার কর্তৃক মনোনীত হবেন।

৪। সরকারি সদস্য ঃ সরকার কর্তৃক নির্দেশিত অফিসারগণ পদাধিকার বলে উপজেলা পরিষদের সদস্য হবেন। তবে তাদের কোন ভোটাধিকার থাকবে না।

৫। মনোনীত সদস্য  ঃ উপজেলার অধিবাসী এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্য এমন একজনকে সরকার মনোনীত করবেন।

৬। উপজেলা কেন্দ্রীয সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান পদাধিকার বরে উপজেলা পরিষদের সদস্য হবেন।


চেয়ারম্যান কার্যকাল/ যোগ্যতা ও অযোগ্যতা ঃ

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যকাল হবে তার দায়িত্ব গ্রহণের দিন হতে পরবর্তী তিন বৎসর। তবে তার কার্যকাল শেষ হলে তার উত্তরাধিকারী দায়িত ¡ গ্রহন না করা পর্যন্ত তিনি স্ব-পদে বহাল থাকবেন।

১। মনোনীত সদস্যদের (৩ জন মহিলা ও ১ জন পুরুষ) কার্যকাল হবে তাদের মনোনয়নের তারিখ হতে ৩ বছর।

২। চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।


চেয়ারম্যানের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা ঃ

ক) কোন ব্যক্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন, যদি-

১। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হন;

২। তার বয়স কমপক্ষে ২৫ বৎসর হয় ও

৩। সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভোটার তালিকায় তার নাম থাকে।

খ) কোন ব্যক্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওযার অযোগ্য হবেন না , যদি-

১। তিনি কোন যোগ্য আদালত কর্তৃক মানসিকভাবে অুসস্থ বলে ঘোষিত হন।

২। তিনি দেউলিয়া হন।

৩। তার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকে অথবা তিনি কোন বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন কিংবা আনুগ্যত ঘোষণা বা স্বীকার করেন।

৪। তিনি ফৌজদারী অপরাধে কমপক্ষে ২ বছর মেয়াদে দন্ডিত হয়ে থাকেন এবং দন্ড ভোগ করার পর ৫ বছর পার হয়ে না থাকে।

৫। বাংলাদেশের বা সংশ্লিষ্ট পরিষদের স্থানীয় কোন কর্তৃপক্ষের বেতনভোগী সার্বক্ষণিক কর্মচারী হয়ে থাকেন।

৬। তিনি পরিষদের সাথে কোন লাভজনক চুক্তিতে আবদ্ধ থাকেন অথবা জরুরী পণ্য সরবরাহের জন সরকার নিযুক্ত ডিলার হয়ে থাকেন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কোন ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার কোন পদে বহাল থাকতে পারবেন না।


চেয়ারম্যানের অপসারণ ও পদত্যাগ/ ক্ষমতা ও দায়িত্ব ঃ

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যদি শারীরিক বা মানসিকভাবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, অথবা যদি তিনি গুরুতর অসাদাচরণের জন্য দোষী কিংবা পরিষদের অর্থ বা সম্পত্তি হানি বা তার অপব্যবহারের জন্য দায়ী হন তা হলে তা উদ্দেশ্যে আহুদ পরিষদের বিশেষ সভায় অপসারণ যোগ্য বলে গৃহীত প্রস্তাব পরিষদের মোট সদস্যদের চার-পঞ্চমাংশ ভোটে গৃহীত হয় এবং এটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হলে চেয়ারম্যান অপসারিত হবেন। চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে সরকারের নিকট তার স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে পদত্যাগ করতে পারবেন।

 

উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও দায়িত্ব ঃ

উপজেলা পরিষদের সকল নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের উপর ন্যাস্ত থাকবে। এ ক্ষমতা তিনি নিজে অথবা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রয়োগ করবেন। উপজেলায় কার্যরত অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব সরকারের নিকট প্রদান করবেন।


উপজেলা পরিষদের কার্যাবলি ঃ

সংশ্লিষ্ট উপজেলার সার্বিক উন্নয়মূলক পরিষদরে ব্যাপক কার্যাবলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় ঃ (১) সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় ও আঞ্চলিক বিষয়সমূহের পরিচালানামূলক কার্যাবলি এবং (২) উপজেলার উন্নয়ন ও তৎসংশ্লিষ্ট কার্যাবলি।

নি¤েœ এদের বিস্তৃত বিবরণ দেয়া হল ঃ

সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় ও আঞ্চলিক বিষয়গুলো হল ঃ দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার : (১) আয়কর, আমদানি- রুপ্তানি শুল্ক, আবগারী শুল্ক, ভূমি রাজস্ব, ভূমি কর ইত্যাদি কেন্দ্রীয় রাজস্বের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা; (২) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা; (৩) খাদ্যসমেত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সংরক্ষণ; (৪) বৃদায়তন বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও দুগ্ধ খামার রক্ষণাবেক্ষণ; (৫) হাসপাতাল; (৬) বৃহদায়তন শিল্পের ব্যবস্থাপনা; (৭) সামুদ্রিক মৎস্য শিক্ষার; (৮) কৃষি, চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিষয়ক শিক্ষা; (৯) আন্ত: জেলা সেচ ব্যবস্থা; (১০) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ; (১১) আন্তঃ জেলা ও আন্তঃ উপজেলার যোগযোগ ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ; (১২) বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্প ইত্যাদি।


উপজেলার উন্নয়নমূলক কার্যাবলিকে নি¤েœাক্ত শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়ঃ

ক) উন্নয়ন ঃ উপজেলার সার্বিক উন্নয়নরে লক্ষ্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন এবং এগুলোর মূল্যায়নের ভার সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের উপর থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া সুপারিশমালার ভিত্তিতে উপজেলা পরিষধ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।

খ) ইউনিয়ন পরিষদকে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও উৎসাহ প্রদান ঃ উপজেলা পরিষদ এর অধীন সকল ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে এদের প্রয়োজনীয় সাহায্য ও উৎসাহ প্রদান করবে। পরিষদ- ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। এটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সেক্রেটারীদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।

গ) জেলা পরিষদকে সাহায্য করা ঃ উপজেলা পরিষদ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে জেলা পরিষদকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দান করবে। জেলা পরিষদের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির যে অংশ উপজেলা পরিষদের আওতায় পড়বে এটা সে অংশের বাস্তবায়নের জেলা পরিষদকে সাহায্য করবে।

ঘ) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ঃ উপজেলা পরিসদ সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করবে। এ ব্যাপারে এটা স্বাস্থ্য দফতরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। এটা ব্যতীত উপজেলা পরিষদ সরকারের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

ঙ) সমবায় আন্দোলন সম্প্রসারণ ঃ গ্রামাঞ্চলের জনগণের মধ্যে সমবায়ের সার্বিক বিকাশ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ কাজ করবে। এ ব্যাপারে জনগনের মধ্যে প্রচার কার্য পরিচালনা ও জনগণকে উৎসাহ প্রদান করবে।

চ) শিক্ষা ঃ সংশ্লিষ্ট উপজেলায় শিক্ষার সম্প্রসারণ কল্পে উপজেলা পরিষদ কাজ করবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য পরিষদ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এ জন্য পরিষদ শিক্ষা বিভাগের সাথে সহযোগিতা করবে।

ছ) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি  ঃ পরিষদ উপজেলার কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা, আয়ের পথ প্রশস্তকরণ ও বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাদ্যমে কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করবে।

জ) কৃষি উন্নয়ন ঃ উপজেলা পরিষদ এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি কার্যক্রমের সার্বিক বিকাশ সাধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ঝ) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের উন্নতি সাধন ঃ উপজেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ঞ) তদারকী কাজ ঃ পরিষদ সংশ্লিষ্ট উপজেলায় নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের তদারক নিয়ন্ত্রন ও সমন্বয় সাধন করবে। তবে পরিষদ বিচার-বিভাগীয় কর্তাব্যক্তিদের ( যেমন- মুন্সেফ, ম্যাজিষ্ট্রেট) উপর এ জাতীয় নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ পরিচালনা করবে পারবে না।

 

উপজেলা পরিষদের আয়ের উৎস ঃ

উপজেলা পরিষদ তার ব্যপক উন্নয়নমূলক কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য নি¤œবর্ণিত উৎসগুলো  হতে আয় করবে ঃ

১। ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপজেলা পরিসদ কর্তৃক আরোপিত কর, রেট, ফিস প্রভৃতি।

২। উপজেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত সম্পত্তি হতে উপার্জিত আয়, মুনাফা প্রভৃতি।

৩। বিভিন্ন বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত আয়।

৪। উপজেলার অন্তর্গত কাজের জন্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ।

৫। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেয়া আর্থিক অনুদান।

৬। উপজেলা পরিসদ কর্তৃক ব্যয় আরোপিত হতে পারে এমন উৎস। যেমন

ক) বিভিন্ন পেশা, ব্যবসা ইত্যাদির উপর আরোপিত কর।

খ) কৃষি ও শিল্প প্রদর্শনী, মেলা ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের জন্য আরোপিত কর।

গ) উপজেলার আওতাধীন জলমহলের ইজারার অর্থ।

ঘ) রাস্তায় আলো দেয়া হতে প্রাপ্ত কর।

ঙ) যাত্রা, নাট্যানুষ্ঠান প্রভৃতি আমোদ-প্রমোদমূলক ব্যবস্থা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ।

চ) হাট, বাজার ও ফেরী হতে সরকার নির্ধারিত ইজারার টাকা।

ছ) উপজেলা পরিষদ কর্তৃক মজুরীকৃত লাইসেন্স, পারমিটের উপর ধার্যকৃত কর।

জ) পরিষদ কর্তৃক ব্যবস্থিত বিভিন্ন সেবা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উপর আরোপিত ফিস।


৩। পৌরসভা  ঃ

পরিচিতি ঃ পূর্বে ছোট ছোট শহরে প্রবর্তিত শহর কমিটির জায়গায় বর্তমানে একটি পৌরসভা থাকবে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রতিটি পৌরসভাকে কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত করে প্রত্যেক এলাকা হতে তিন জন সদস্য নির্বাচিত করা হবে। বড় বড় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড যাকে নগর পঞ্চায়েত বলা হত, বর্তমানে এদেরকে বাতিল করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ওয়ার্ডকে (নগর পঞ্চায়েতগুলোকে) এক একটি নির্বাচনী এলাকা বলে ধরা হবে। এ সমস্ত এলাকা হতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সদস্য নির্বাচিত হবে।


পৌরসভার গঠন ঃ

একজন চেয়ারম্যান এবং সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্বাচিত সদস্য নিয়ে পৌরসভা গঠিত হবে। পৌরসভার সদস্যদেরকে কমিশনার বলা হয়। চেয়ারম্যান ও কমিশনারগণ পৌর এলাকার ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হন। পৌরসভা গঠনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি পূর্ণাঙ্গ পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড থাকে। প্রত্যেক ওয়ার্ড হতে একজন কমিশনার নির্বাচিত হন। প্রতি তিনটি ওয়ার্ড হতে সংরক্ষিত আসনে একজন মহিলা কমিশনার নির্বাচিত হন। এই ভাবে পৌরসভার মোট নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা হল ঃ একজন চেয়ারম্যান, আঠার জন কমিশনার ও ছয় জন মহলিা কমিশনার (সংরক্ষিত আসনে) মোট পঁচিশ জন সদস্য। প্রত্যে পৌরসভার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা থাকেন। তিনি পৌরসভার কাজের সমন্বয় সাধন ও এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেন। পৌরসভার চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কার্যপরিচালনার জন্য কমিশনারদেরম মধ্য হতে তিন জন প্যানেল চেয়ারম্যান নির্ধারিত থাকেন। কমিশনারগণই তাদেরকে নির্বাচিত করেন পৌরসভার কার্যকাল পাঁচ বছর।


সদস্যদের যোগ্যতা ঃ

সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ভোটার তালিকায় যার নাম আছে এবং অন্ততঃপক্ষে ২৫ বছর বয়স্ক এমন যে- কোন লোক পৌরসভার চেয়াম্যান নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন। ভোটার তালিকায় নাম আছে, এমন যে কোন লোক কমিশনার নির্বাচিত হতে পারবেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদরে কোন সদস্য পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারবেন না। দেউলিয়া, দালাল আইন সাজাপ্রাপ্ত (মুক্তির পর পাঁচ বৎসর অতিবাহিত না হলে), সরকারি অথবা আধা-সরকারি সংস্থায় চাকরিরত কোন ব্যক্তি পৌরসভার চেয়ারম্যান কিংবা কমিশনার নির্বাচিত হতে পারবেন না। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারদের ভিত্তিতে পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


সদস্যদের অপসারণ ও শূণ্যপদ পূরণ ঃ

অসাদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পৌরসভার তহবিল আত্মসাৎ, অক্ষমতা এবং যুক্তিসংগত কারণ দর্শান ব্যতীত পৌরসভার পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান কিংবা যে কোন কমিশনারকে তার পদ হতে অপসারণ করা যাবে। অবশ্য এ ব্যাপারে পৌরসবার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের ভোটে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে এবং এটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। এতদ্ব্যতীত ব্যক্তিগত কারণেও যে কোন সদস্য পদত্যাগ করতে পারবেন। নির্দিষ্ট কার্যকাল শেষ হওয়ার ১ বৎসর পূর্বে চেয়াম্যান পদ শূন্য হলে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে। এর কম সময়ের জন্য হলে কমিশনারদের ভোটে তাদের মধ্য হতে একজন সংশ্লিষ্ট শূন্য পদে সমাসীন হবেন। কমিশনারদের শূন্যপদ উপ- নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।


পৌরসভার কার্যাবলি ঃ

পৌরসভার বহুবিধ কার্যাবলিকে নি¤œলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে ঃ

১। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যাবলি ঃ পৌরসভা শহরাঞ্চলের জনসাধারণের স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যবলি সম্পাদন করবে। এটি সকল প্রকার সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ, কলেরা ও বসন্তের টীকা দান, শহরাঞ্চলের পরিষ্কা-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

২। জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি ঃ শহরাঞ্চলের পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন, সর্বসাধারনের মিলনকেন্দ্রসমূহ ও সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, সাধারণের যাতায়াতের রাস্তাঘাট, জনসাধারণের ব্যবহারের নিমিত্ত বাগান, খেলার মাট, গৃহ নির্মাণ, খাদ্য ও পানীয়ের নিয়ন্ত্রণ, অনুন্নত ও অনগ্রসর জনসাধারণের উন্নতি, স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্যে দান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ইত্যাদি পৌরসভার জনকল্যাণ বিষয়ক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।

৩। অন্যান্য কার্যাবলি ঃ এতদ্ব্যতীত শহরাঞ্চলের বাজার নিয়ন্ত্রন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সর্বহারাদের সাহায্য দান, সাম্প্রদায়িকতার ও আঞ্চলিকতা নিরুৎসাহ করে সামাজিকতা, নাগরিকত্ব ও দেশপ্রেমের গুণাবলির উৎকর্ষ সাধন করা, প্রবাসী ও তথায় আগতদের সকল প্রকার সুখ-সুবিধার সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্যের ব্যবস্থা করা, জাতীয় ও সরকারি দিবসসমূহের উদ্যাপনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা, সমাজন্নোয়ন, সমবায় আন্দোলন ও কুটীরশিল্পে ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি কাজসমূহ পৌরসভা সম্পাদন করবে ।


তৃতীয় অধ্যায়

৩.১ নারীর ক্ষমতায়ন-এর সংজ্ঞা ঃ

ক্ষমতায়ন বলতে নারীর ক্ষমতায়নকেই প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নারীকে সরাসরি অংশগ্রহণ করানোর প্রক্রিয়াকে নারীর ক্ষমতায়ন বলা হয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য বিরাজ করছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু’টি দিক হলো ঃ

প্রথমত, নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা ঃ

(১)   দৈনন্দিন কাজ ও ভূমিকার ক্ষেত্রে।

(২)  দায়- দায়িত্বের ক্ষেত্রে,

(৩)  অবকাশ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে।

দ্বিতীয়ত, পুরুষের তুলনায় নারীর সীমিত অধিকার ঃ

(১) সম্পদের ক্ষেত্রে যেমন- অর্থ, জমিজমা, ঋণ, প্রশিক্ষণ, জ্ঞান, তথ্য, কর্মসংস্থান।

(২)পছন্দের ক্ষেত্রে যেমন- জীবন ও জীবিকা নির্বাহ, বিয়ে, সন্তান ধারণ ও তা লালন।

(৩)সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যেমন- মতামত প্রদান ও নীতি নির্ধারণ ইত্যাদি।

এসব বৈষম্যের কারণে নারীরা আজ সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে পুরুষের, তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই বলা যায়, যে প্রক্রিয়া নারী ও পুরুষের মধ্যে বিরাজমান সকল অসমতা ও বৈষম্য দূর করে নারীকে পুরুষের সমকক্ষতায় সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে, তাই হলো নারীর ক্ষমতায়ন। এ ক্ষমতায়নের লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতার উৎস ও কাঠামোর পরিবর্তন। নারীর ক্ষমতায়ন শুধু নারীর ইস্যু নয়, একটি সামাজিক বিষয়। কেননা, নারীর ক্ষমতায়নের সুফল নিপীড়নকারীর ভূমিকা থেকে মুক্ত করে। অন্যভাবে বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা নারী তার নিজ অবস্থান বা আপেক্ষিক সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হবে, বিরাজমান সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতিবাদে সোচ্ছার হবে।


     জেন্ডার ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক গবেষক শামীমা পারভীন বলেছেন, “নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে নারী বস্তুগত ও মানবিক সম্পদের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে, পিতৃতন্ত্র ও সকল প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সকল কাঠামোয় নারীর বিরুদ্ধে জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করে।”

0 comments:

Post a Comment