Monday, March 14, 2016

বাংলাদেশের সরকারী অর্থ ব্যবস্থা


প্রথম অধ্যায়
ভূমিকাঃ
অর্থনীতি মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা স্বরুপ নির্ণয় করে এবং সমাধানের পথ নির্দেশ করে। ঊনবিংশ শতকের রাষ্ট্র আর বর্তমান রাষ্ট্র এক নয়। বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে রাষ্ট্রীয় কার্যাদির সীমানা। শুধুমাত্র জনগণের যানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ বলে বিবেচিত নয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করে সরকার। কাজেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে সরকারের নানা মুখী কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। ফলে সরকারকে আয়ের উৎস সন্ধান এবং ব্যয়ের খাত নিশ্চিত করতে হয়। প্রয়োজনে ঋণ নিতে হয়। সরকারের এরুপ আয়-ব্যয় এবং ঋণ সংক্রান্ত কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করেই সরকারি অর্থব্যস্থার উদ্ভব ঘটেছে। সরকারি অর্থব্যবস্থা সরকারের আয়, ব্যয় ও ঋণ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে বেসরকারি বা ব্যক্তিগত অর্থব্যবস্থা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিয়েও আলোচনা করে। রাষ্ট্র বলতে জাতীয় সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারসহ সব রকমের আঞ্চলিক, স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য যাবতীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়। সরকারি অর্থব্যবস্থা রাষ্ট্রের আর্থিক অর্থ সংক্রান্ত সব রকমের কার্যক্রম, সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আলোকপাত করে। রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়, ঋণ সংগ্রহ ও বিতরণ, বিনিয়োগ ইত্যাদি সব রকমের নীতি নির্ধারণ ও তৎসংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানসমূহের যাবতীয় আলোচনা অর্থনীতির যে অংশে করা হয় তাকে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলে।



সরকারি অর্থব্যবস্থার সংজ্ঞাঃ

সরকারি অর্থব্যবস্থা রাষ্ট্রের আর্থিক অর্থসংক্রান্ত সব রকমের কার্যক্রম, সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আলোকপাত করে। রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়, ঋণ সংগ্রহ ও বিতরণ, বিনিয়োগ ইত্যাদি সব রকমের নীতি নির্ধারণ ও তৎসংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধান সমূহের যাবতীয় আলোচনা অর্থনীতির যে অংশে করা হয় তাকে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলা হয়। এক কথায়, অর্থনীতির ঐ শাখাকে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলা হয়, যে শাখায় সরকারের যাবতীয় আয়-ব্যয় এবং অন্যান্য আর্থিক সমস্যা সমূহ আলোচনা করা হয়।

নিম্নে কয়েকজন অর্থনীতিবিদের সংজ্ঞা আলোচনা করা হলঃ-

অর্থনীতিবিদ এইচ.ডালটন বলেন, “সরকারি অর্থব্যবস্থা সরকারের আয়-ব্যয় এবং এদের একটির সাথে অন্যটির সমন্বয় সাধনের কার্যাদি আলোচনা করে।”

ফিলিপস ই. টেইলর এর মতে, “ সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে সংঘবদ্ধ দল হিসেবে জনসাধারনের যাবতীয় আর্থিক সমস্যার সাথে আলোচিত বিষয়কে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলে।”

আরমিটেজ স্মিথ বলেন,“ সরকারি অর্খব্যবস্থা হল রাষ্ট্রীয় আয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের প্রকৃতি ও নীতির অনুসন্ধান।”


গবেষণার উদ্দেশ্যঃ

অর্থশাস্ত্রের একটি বিশেষ শাখা হলো সরকারি অর্থব্যবস্থা বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পরিগ্রহ করায় এর কার্যাবলি বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। বাংলাদেশের জন্য সরকারি অর্থব্যবস্থা একটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম। কেননা, সরকারি অর্থব্যবস্থায় সরকারের আয়-ব্যয়, আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান, আর্থিক প্রশাসন, ঋণ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ বন্টণ ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। তাই আমাদের সরকারি অর্থ-ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে। আর তাই “বাংলাদেশের সরকারি অর্থব্যবস্থা” সম্পর্কে শীর্ষক টার্ম পেপারটি পড়তে হবে। এই টার্ম পেপারটি পড়লে আমরা যা যা জানতে পারব তা সংক্ষেপে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ- যথা

ক্স        সরকারি অর্থব্যবস্থার ভূমিকা ও এর উৎকৃষ্ট মানের সংঙ্গা সম্পর্কে জানতে পারবো।

ক্স        সরকারি অর্থব্যবস্থার বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে  জনাতে পারবো।

ক্স        সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরু ত্ব ও সর্বাধিক সামাজিক সুবিধাতত্ত্ব সম্পর্কে জানতে পারবো।

ক্স        বাংলাদেশের বাজেট, বাজেটের সংজ্ঞা ও বাজেটের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবো।

ক্স        বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়, ব্যয়ের খাত, ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ও ব্যয় হ্রাসের উপায় সম্পর্কে জানতে পারবো।

ক্স        বাংলাদেশের সরকারের কোন কোন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা উচিত, বাজেট কেমন হওয়া উচিত ও কর ব্যবস্থার উন্নতি কিভাবে সম্ভব ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবো।























অধ্যায় বিন্যাসঃ

“বাংলাদেশের সরকারি অর্থব্যবস্থা” শীর্ষক টার্ম পেপারটি পাঁচটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এদের অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ সমূহ হলঃ-

প্রথম অধ্যায়ঃ (ভূমিকা, সরকারি অর্থব্যবস্থার সংজ্ঞা, গবেষণার  উদ্দেশ্য, অধ্যায় বিন্যাস)

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ ( সরকারি অর্থব্যবস্থার পরিধি ও বিষয়বস্তু, সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরু ত্ব, সরকারি অর্থব্যবস্থার সর্বাধিক সামাজিক সুবিধাতত্ত্ব।

তৃতীয় অধ্যায় ঃ (বাজেট, বাজেটের সংজ্ঞা, বাজেটের উদ্দেশ্য, কর, করের সংজ্ঞা।)

চতুর্থ অধ্যায়ঃ (সরকারি আয়ের সংজ্ঞা, সরকারি আয়ের উৎসসমূহ, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে সরকারি অর্থব্যবস্থার ভূমিকা, সরকারি ব্যয়ের সংজ্ঞা, সরকারি ব্যয়ের গুরু ত্ব, বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়ের খাত, ব্যয় বৃদ্ধির কারণ, সরকারি ব্যয় হ্রাসের উপায়।)

পঞ্চম অধ্যায়ঃ (বাংলাদেশ সরকারের কোন কোন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা উচিৎ, বাজেট কেমন হওয়া উচিৎ, কর ব্যবস্থার উন্নতি কিভাবে সম্ভব, উপসংহার, গ্রন্থপঞ্জি।)



দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ

সরকারি অর্থব্যবস্থার পরিধি ও বিষয়বস্তু ঃ

অর্থশাস্ত্রের একটি বিশেষ শাখা হল সরকারি অর্থব্যবস্থা। বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের রু প পরিগ্রহ করায় এর কার্যাবলি বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। এর পাশাপাশি সরকারি অর্থব্যবস্থার পরিধি ও বিষয়বস্তু বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। নিম্নে সরকারি অর্থব্যবস্থার পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা করা হলঃ-

১.      সরকারের আয়ঃ সরকারি অর্থব্যবস্থা সরকারের আয় নিয়ে আলোচনা করে। সরকার ও এর বিভিন্ন স্থানীয় আঞ্চলিক জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংগঠনের আয়ের প্রকৃতি, আয় সংগ্রহের বিভিন্ন উৎস, জনগণ ও সমাজের উপর আয় সংগ্রহের প্রভাব, সরকারি আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান প্রভৃতি সরকারি অর্থব্যবস্থার আলোচনা বিষয়বস্তু।

২.     সরকারি ব্যয়ঃ সাধারণভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সরকার যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তাকে সরকারি ব্যয় বলে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখা, প্রশাসনিক পরিচালনা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনে সরকার ব্যাপক অর্থবহন করে। সরকার শুধু সাহায্য গ্রহণই করে না, প্রয়োজনে অন্য রাষ্ট্রকে অনুদান ও সাহায্য করে।

৩.     সামঞ্জস্য বিধান: সরকারি অর্থব্যবস্থা সরকারি আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সমাজের মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করে। উপর্যুক্ত আর্থিক নীতি, রাজস্বনীতি ও বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার এ দুরু হ কাজ সম্পাদনের প্রয়াস চালায়। কাজেই আর্থিক নীতি রাজস্বনীতি ও বাজেট সরকারি অর্থব্যবস্থার বিষয়বস্তু।

৪.     আর্থিক প্রশাসন: আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে জাতীয় রাষ্ট্র। এর জনসংখ্যা যেমন বিপুল, আয়তন তেমনি বিশাল। তাই একটি সুষ্ঠ আর্থিক প্রশাসন এর সফল পরিচালনার জন্যে অপরিহার্য। আর্থিক প্রশাসন সরকারের আয় ও ব্যয় পরিচালনার মধ্যে সাম্ঞ্জস্য বিধান করে। ফলে আর্থিক প্রশাসন সরকারি অর্থব্যবস্থা বিষয় বস্তু। আর্থিক প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান গুরু ত্বের কথা বিবেচনা করে ডালটন একে সরকারি অর্থব্যবস্থার একটি শাখা বলে অভিহিত করেছেন।

৫.     ঋণব্যবস্থাঃ ঋণ ব্যবস্থা ও সরকারি অর্থব্যবস্থার বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। সরকারের ব্যয়ের তুলনায় আয় কম হলে তাকে গ্রহণ করতে হয়। এ ঋণ নেয় দেশের অভ্যন্তর এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে। ডালটনের মতে,“সরকারের আয় উপার্জনের একটি পদ্ধতি হল সরকারি ঋণ।”

৬.     বিনিয়োগ : অর্থব্যবস্থা সরকারের বিনিয়োগের সাথে সম্পর্কিত। আর তাই বিনিয়োগ সরকারি অর্থব্যবস্থার আলোচ্য বিষয়। অর্থ ব্যবস্থা সরকারি বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে আলোকপাত করে।

কেননা জাতীয় অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগর বিকল্প নেই।

৭.     বন্টনব্যবস্থা: বন্টনব্যবস্থা ও সরকারি অর্থব্যবস্থার আলোচ্য বিষয়। বন্টন ব্যবস্থা সুষম না হলে দেশে সম্পদ বৈষম্য দেখা দেয়। বৈষম্য নিরসনে তাই প্রয়োজন সুষ্ঠ ও ন্যায় সঙ্গত বন্টন ব্যবস্থা। সরকারের আয় ও সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দানে সরকার সর্বদা মনোযোগী থাকে।

৮.     সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করাঃ সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সরকারি অর্থব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু আধুনিক বিপুল আয়তনের রাষ্ট্রে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা খুবই কঠিন কাজ। সরকার এ কঠিন কাজ সম্পাদন করার জন্য উপযুক্ত আর্থিক নীতি, রাজস্বনীতি ও বাজেট নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এ সকল নীতি সরকারি অর্থব্যবস্থার বিষয়বস্তু হিসেবে পরিণত হয়।

৯.     জনসেবামূলক ব্যয়ঃ সরকার জনসেবামূলক কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে। যেমন- স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণ এতিম খানা নির্মাণ ইত্যাদি। সাধারণ লোকের অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য সরকার এরু প ব্যয় করে থাকে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এরু প সেবা মূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভর নয়।

১০. অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ রাষ্ট্রসমূহ নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা করে। এ সকল উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারকে বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হয়। কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেবল বেসরকারি উদ্যেগে সুষ্ঠভাবে করা সম্ভব নয়। এককথায়, বলা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দায়িত্ব বর্তমান সরকারের হাতে।

সরকারি অর্থব্যস্থার গুরুত্ব:-

আধুনিক রাষ্ট্রের শুধু দেশকে বৈদেশিক আক্রমণ হতে রক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে না বরং সরকার সমাজে কর্মস্ংস্থানের ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান, রেলপথ, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ, সেচ, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ সংরক্ষণসহ নানাবিধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে। বর্তমান রাষ্ট্রের জনকল্যাণ মূলক কাজগুলো খুবই গুরু ত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাই আধুনিক সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরু ত্ব অপরসীম। নিম্নে সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরু ত্ব আলোচনা করা হলোঃ-

১.      সামাজিক কল্যাণ: অধুনা সরকার বেশ কিছু কর্মকান্ড পরিচালনা করে যায় ফলে কোন বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণী নয়, বরং সমাজের সকল নাগরিকের সমভাবে মঙ্গল সাধন করে। জাতীয় প্রতিরক্ষায় সরকারের ব্যয়, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কল্যাণ সাধন করে এবং জানমাল নিরাপদ রাখে। সরকারি অর্থব্যবস্থা পাঠের মাধ্যমে সরকারের জনকল্যাণমুখী কার্যাদি সম্পর্কে অবহতি হওয়া যায়।

২.     আয় ও সম্পদের সুষম বন্টন: অর্থনৈতিক বৈষম্য কোন দেশের জন্যই কাম্য নয়। বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রগুলো আয় ও সম্পদের সুষম বন্টন করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার রক্ষায় সচেষ্ট থাকে। সরকার সমাজের সম্পদশালীদের ওপর কর আরোপ করে এবং ঐ সংগৃহীত অর্থ দরিদ্র, অসহায়, দুঃস্থ ও দুর্গত মানুষকে সাহায্য এবং রিলিফ হিসেবে প্রদান করে। ফলে জাতীয় আয় পুণর্বন্টিত হয় এবং সমাজের ধনবৈষম্য হ্রাস পায়।

৩.     বৈষম্য দূরীকরন: সমাজের মানুষের মধ্যে ধনী-গরীবের ব্যবধান হ্রাস করে একটি স্থিতিশীল সমাজ গঠনে সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরু ত্ব অপরসীম। সরকার ধনী ব্যক্তিদের উপর অধিক হারে কর আরোপ করে অর্জিত আয় দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। কাজেই দারিদ্র্য বিমোচনে তথা ধনী গরিবের ব্যবধান কমাতে সরকারি অর্থব্যবস্থা পাঠের গুরু ত্ব অপরসীম।

৪.     কর্মসংস্থান সৃষ্টি: জাতীয় জীবনের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা ও অভিশাপ হল বেকারত্ব। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। সরকার নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করে, কর্মসংস্থান বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। জাতীয় সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাসে সরকারি অর্থব্যবস্থা পাঠের গুরু ত্ব অপরসীম।

৫.     অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন ঃ দেশের সমাগ্রিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সরকার মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচন নিযন্ত্রণ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে সহায়তা করতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচন উভয়ই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের উপর কোনরু প সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বাজার ব্যবস্থা, মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বা পূর্ণ নিয়োগ স্তর অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হয় না। তাই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে সরকারকে আর্থিক নীতি ও রাজস্বনীতি প্রণয়ন করা দরকার হয়ে পড়ে।

৬.     বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ ঃ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাণিজ্য চক্রের উত্থান-পতন স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলে বাজারে পণ্য ও চাহিদা বাড়ে। জনগণের আয় বাড়ে এবং অর্থনৈতিক গতি থাকে স্বাভাবিক কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে পণ্য ও শ্রমের চাহিদা এবং উৎপাদন ও আয় হ্রাস পায়, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অচল হয়ে পড়ে। তাই বাণিজ্যচক্রের এ অবাঞ্চিত উত্থান-পতন ঠেকাতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং বাণিজ্য চক্র বিরোধী রাজস্বনীতি প্রণয়ন করে।

৭.     জনকল্যাণমূলক কাজ ঃ সরকার বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বেকারত্বভাতা প্রদান, পেনশন প্রদান প্রভৃতি বহুবিধ কাজ আধুনিক জনকল্যাণ কৌশল সম্পর্কে জানতে সরকারি অর্থব্যবস্থা পাঠের গুরু ত্ব অপরসীম।

৮.     সুষম উন্নয়ন ঃ বর্তমানে জনসংখ্যা যেমন বিপুল, আয়তন ও তেমনি বিশাল। দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য সকল অঞ্চলের সুষম ও ভারসাম্য পূর্ণ উন্নয়নের বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় বা জাতীয় সরকারের পক্ষে কেবল দেশের সকল অঞ্চলের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সুষম উন্নয়নের লক্ষে সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। সরকারি অর্থব্যবস্থা পাঠের মাধ্যমে জনগণ ও সরকারকে দেশের সকল অংশের সুষম উন্নয়ন সাধনের জ্ঞানদান করতে পারে।

৯.     একচেটিয়া কারবার নিয়ন্ত্রণ ঃ পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পুঁজিপতিরা সর্বদা অধিক মুনাফা অর্জনের প্রত্যাশায় থাকে। ফলে তারা পণ্য ও সেবা উপর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকে এবং সমাজে একচেটিয়া কারবারের উদ্ভব ঘটে। একচেটিয়া কারবারের ফলে সমাজে পণ্য ও সেবার সুষম বন্টন ব্যহত হয় এবং ভোক্তা হিসেবে জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রতিকূল অবস্থা নিরসনে সরকার একচেটিয়া কারবার নিয়ন্ত্রণ করে এবং গ্রহণ করে প্রতিযোগিতা মূলক বাজার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা।

১০. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি ব্যপক ও জটিল বিষয় এবং ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যেগে এটি অর্জন খুবই দুরু হ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার নানাবিধ কার্যাদি পরিচালনা করে। সুষ্ঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে সরকার এ দুরু হ কার্যাদি সম্পাদনে আত্মনিয়োগ করে। সরকারি অর্থব্যবস্থা পাঠের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশল সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।

১১.  জনসেবামূলক কাজ ঃ আধুনিক সরকার জনসেবামূলক কাজে ্প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে। যেমনঃ স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণ, এতিমখানা নির্মাণ ইত্যাদি। সাধারণ লোকের অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য সরকার এরু প ব্যয় করে থাকে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এরু প সেবামূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

সরকারি অর্থব্যবস্থায় সর্বাধিক সামাজিক সুবিধা তত্ত্ব ঃ

সরকারি অর্থব্যবস্থায় যেসব নীতি বাস্তবায়ন করা হয় “সর্বাধিক সামাজিক সুবিধা তত্ত্ব” তাদের অন্যতম। সরকারের আয় ব্যয় সংক্রান্ত কাজের মূল উপাদানই সর্বাধিক সামাজিক সুবিধা তত্ত্ব।

এই নীতি অনুসারে কর আদায় (আয়ের উৎস নির্ধারণ), ব্যয় নির্ধারণ ( ব্যয়ের খাত নির্বাচন) এবং বাজেট প্রণয়ন(আয়-ব্যয়ের পরিমাণ নিধারণ) প্রভৃতি কার্যক্রম এমনভাবে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত যেন সমাজের কল্যাণ সর্বোচ্চ হয় বা সর্বাধিক সামাজিক সুবিধা তত্ত্ব অর্জিত হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, সমাজের কল্যাণ বা সুবিধা সর্বোচ্চ করার জন্য সরকারের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ কাম্যভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সরকারি আয়-ব্যয়ের এ নীতিকে সরকারি অর্থব্যবস্থায় সর্বাধিক সুবিধা তত্ত্ব বলা হয়।

অর্থনীতিবিদ ডালটনের মতে, রাষ্ট্র যদি নিম্ন লিখিত লক্ষ্য সমূহ অর্জনের চেষ্টা করে তবেই বলা যায় যে, সর্বাধিক সামাজিক সুবিধা তত্ত্ব প্রয়োগের উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছেঃ-

১.      রাষ্ট্র অভ্যন্তরীন গোলযোগ ও বহিঃশত্র“র আক্রমন হতে সমাজকে রক্ষা করবে এবং একই সঙ্গে আবশ্যক হলে রাষ্ট্র সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন সাধন করে।

২.     সমাজের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনের জন্য রাষ্ট্র দুটি শর্ত পূরণ করে যেমনঃ-

ক) উৎপাদনের উৎকর্ষ সাধনের জন্য রাষ্ট্র ঃ
  • উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি রাষ্ট্র স্বল্প শ্রম বিনিয়োগের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনের প্রতি গুরু ত্ব দেয়।
  • উৎপাদন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনয়নের মাধ্যমে বেকারত্বে বা অন্যভাবে কৃত অপচয়ের পরিমাণ কমাতে সচেষ্ট থাকে এবং
  • উৎপাদন প্রকৃতির মনোন্নয়নে প্রতিযতœশীল হয়।
খ) রাষ্ট্র অন্যভাবে বন্টনের উৎকর্ষ সাধন করতে পারে, যাতে
  • বিভিন্ন ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে উদ্ভুত আয়ের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হয়।

0 comments:

Post a Comment