Sunday, March 13, 2016

বাংলাদেশে শিল্প উন্নয়নে সমস্যা ও সম্বাবনা

প্রথম অধ্যায়

ভূমিকাঃ

        কোন দেশের অর্থনীতিতে কৃষি ও শিল্প একে অপরের সহযোগী ও পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও শুধু কৃষির উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্পক্ষেত্রের বিকাশ অপরিহার্য।


টার্ম পেপারের উদ্দেশ্য:

টার্ম পেপারের গবেষণা কাজটির উদ্দেশ্য সমূহ নিম্নরুপঃ

১.     শিল্পায়নের পটভুমি।

২.     শিল্পের  প্রকারভেদ।

৩.    বাংলাদেশের শিল্প মালিকানায় ধরন।

৪.     বাংলাদেশের শিল্পায়নের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ।

৫.    বাংলাদেশে শিল্পায়নের উপায়।

৬.     বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পের গুরুত্ব।



মোট কথা, টার্ম পেপার বিভিন্ন ঘটনাবলি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। এছাড়া বিশ্লেষণকৃত ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেক সমস্যার সুপারিশও করা হয় টার্ম পেপারে। সুতরাং শুধু শিক্ষানবিশ গবেষক নয় বরং জাতীয় অনেক সমস্যার প্রকৃত চিত্র নির্ণয় ও তা সমাধানের লক্ষ্যে গবেষকদের সাহায্য করে।


খ) সাহিত্য পর্যালোচনাঃ

                    যে কোন গবেষণা পত্র তৈরি করতে গেলে সাহিত্য পর্যালোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে শিল্প উন্নয়ন সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে এ পর্যন্ত বহু গ্রন্থরচিত হয়েছে। এ বিষয়ে উল্লেখ যোগ্য বই জার্নাল গুলো হলো-

১.     বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর ঃ গ্রামাঞ্চলে ধনতেন্ত্রর বিকাশ।

২.     মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও জহুরুল হক ঃ সরকারী অর্থব্যবস্থাপক।

৩.    কামাল সিদ্দিকী ঃ বাংলাদেশের গ্রামীন দারিদ্র্য: স্বরুপ ও সমাধান, ডানা প্রকাশনী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫।

৪.     মোহাম্মদ মাসুদ রহমান ঃ কৃষি ঋণ বন্টনে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের দশ বছরের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা। চতুবিংশ সংখ্যা ফাগুণ ১৩৯২. ফেব্রুয়ারী ১৯৮৬ ইং।

৫.    সেলিম জাহান : গ্রাম বংলার দারিদ্র : প্রবণতা ও পরিমাণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, চতুবিংশ সংখ্যা ফাগুণ ১৩৯২. ফেব্রুয়ারী ১৯৮৬ ইং।

উপরুক্ত গ্রন্থগুলোতে বাংলাদেশে শিল্প উন্নয়ন সমস্যা ও সম্ভাবনা আলোচনা করা হয়েছে বেশ কয়েকটি জাতীয় পর্যায়ের সেমিনারে। এই টার্ম পেপারে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নে সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশেষ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

গ) গবেষণার পরিধিঃ

                ভূমিকা, শিল্প ও শিল্পের প্রকারভেদ, শিল্প ও শিল্পের প্রকারভেদ, বাংলাদেশের শিল্প মালিকানার ধরন, বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ, বাংলাদেশে শিল্পোন্নায়নের উপায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন শিল্পের গুরুত্ব।

ঘ) গবেষণার সীমাবদ্ধতা ঃ

                সময়ের সল্পতার জন্যবাংলাদেশের শিল্প উন্নয়ন সমস্যা ও সম্ভাবনা ব্যাপারে দেশের সূশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, সাধারণ কল্যাণ কি ভাবছে এ বিষয়কে সরাসরি জরিপ কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পত্র পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ প্রবন্ধ নির্বাচনের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

ঙ) গবেষণার পদ্ধতিঃ

                আলোচ্য টার্ম পেপারটি রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখকের লেখা বই পত্র-পত্রিকা জার্নাল, সমীক্ষা, অন্যান্য প্রকাশনাকে তথ্য সংগ্রহের সেকেন্ডারী ডাটা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেকেন্ডারী ডাটা হিসাবে সবচেয়ে বেশি নির্ভর কর হয়েছে সাম্প্রতিকালে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার উপর।



চ) অধ্যায় বিভাজনঃ

                আলোচ্য টার্ম পেপারটি ৬ অধ্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায় টার্ম পেপারের উদ্দেশ্য থেকে গবেষণা পদ্ধতি পর্যন্ত, ২য় অধ্যায়ে শিল্প ও শিল্পের প্রকারভেদ, ৩য় অধ্যায় বাংলাদেশের শিল্প মালিকানার ধরণ, ৪র্থ অধ্যায় বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ, ৫ম অধ্যায় বাংলাদেশে শিল্পোন্নায়নের উপায়, ৬ষ্ঠ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন শিল্পের গুরুত্ব।



দ্বিতীয় অধ্যায়

শিল্প ও শিল্পের প্রকারভেদঃ

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কারখানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্যে প্রাথমিক দ্রব্যকে মাধ্যমিক দ্রব্যে এবং মাধ্যমিক দ্রব্যকে চ’ড়ান্ত দ্রব্যে পরিণত করা হয়, তাকে শিল্প বলে। কোন দ্রব্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তিনটি স্তর বিদ্যমান। যেমনঃ

১.     প্রাথমিক স্তর

২.     মাধ্যমিক স্তর এবং

৩.    চূড়ান্ত স্তর বা পর্যায়।

উৎপাদনের কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্য পরবর্তীতে পর্যায়ে কিছু দ্রব্য উৎপন্ন  হয় যা সরাসরি ভোগে ব্যবহৃত না হয়ে পুনরায় উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ঋরহরংযবফ মড়ড়ফং এ রুপান্তর হয়। যেমন ঃ বাঁশ হল কাগজ উৎপাদনের প্রাথমিক পণ্য। বাঁশকে যখন কাগজের মন্ড তৈরি করা হয় তখন মন্ড হল উৎপাদনের মাধ্যমিক স্তর এবং সর্বশেষ  মন্ডু থেকে যখন কাজগ তৈরি হয় তখন কাগজ হল চূড়ান্ত স্তর। চূড়ান্ত দ্রব্য সরাসরি ভোগে ব্যবহৃত হয়।

সুতরাং কারখানার অভ্যন্তরে শিল্পের উৎপাদন কার্য পরিচালিত হয়। এরুপ এক একটি কারখানাকে ফার্ম বলে। কোন দ্রব্য পাটশিল্প, বস্ত্রশিল্প, চা শিল্প ইত্যাদির সমন্বয়ে শিল্পখাত গঠিত ।

শিল্পনীতি ২০১০ অনুসারে পন্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংযোজ এবং পরবর্তীতে উৎপাদিত পণ্যের পুনঃসামষ্ফুস্যকরণ ও প্রক্রিয়াকরণ বিষয় সকল কর্মকান্ডকে শিল্প বলা হয়।


তৃতীয় অধ্যায়

শিল্পের প্রকারভেদঃ

শিল্পনীতি ২০০০ অনুসারে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে েিনম্নাক্তভাবে ভাগ করা হয়। যেমন-

১.     বৃহৎ শিল্প ঃ ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে বৃহৎ শিল্প যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় সেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৩০কোটি টাকার অধিক কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠানে ২৫০ জনের অধিকা শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।

২.     মাঝারি শিল্প ঃ ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে শিল্প বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে জমি ্এবং কারখান ভবন ব্যতীত স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয় সহ ১০ কোটি টাকার অধিক এবং ৩০ কোটি টাকার মধ্যে কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০-২৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত।

৩.    ক্ষুদ্রশিল্প : ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্রশিল্প’। হলো যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় সেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী প্রতিস্থাপন ব্যযসহ ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের সংখ্যা ২৫-৯৯ জন।  সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র শিল্প হলো সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের  স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয় ৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা কিংবা যেসব শিল্প যেসব প্রতিষ্ঠানে ১০-২৪ জন নিয়োজিত রয়েছে।


৪.     মাইক্রো শিল্প ঃ

মাইক্রো শিল্প বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভরন ব্যতীত স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয় সহ ৫ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০-২৪ জন শ্রমিক নিয়োজিত।

৫.    কুটির শিল্প ঃ কুটির শিল্প বলতে পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য বিশিষ্ট যেসব শিল্প যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতীত স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয় ৫ লক্ষ টাকার নিচে এবং পারিবারিক সদস্য সমন্বয়ে সর্বোচ্চ ১০ জন নিয়োজিত।

৬.     হাইটেক শিল্প ঃ হাইটেক শিল্প বলতে জ্ঞান ও পুঁজি নির্ভর উচ্চ প্রযুক্তি ভিত্তিক পরিবেশ বান্ধব এবং তথ্য ও যোগাযোগ বা গবেষণা ও উন্নয়ন নির্ভর শিল্পকে বুঝায় ।

             চতুর্থ অধ্যায়

বাংলাদেশের শিল্প মালিকানার ধরনঃ

বাংলাদেশে শিল্প মালিকানার ক্ষেত্রে প্রধানত দু’ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। যেমনঃ

১.     রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও

২.     ব্যাক্তিমালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান।

১। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পঃ

রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ সকল বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় মালিকানার অন্তর্ভুক্ত করা হয়্ রাষ্ট্রপরিচালানর অন্যতম মূলনীতি সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন এবং পাকিস্তানীদের পরিত্যক্ত শিল্পকারখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তন পর দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষত শিল্পখাত বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি অনুসরণ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে বৃহাদয়তন এবং অধিক মূলধন প্রগাঢ় এবং শ্রমঘন।


২। বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান ঃ

বাংলাদেশের বৃহদায়তন শিল্পখাতে সরকারি খাতের প্রাধান্য থাকলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে ব্যক্তি মাীলকানা বা বেসকারি মালিকাানার প্রাধান্য রয়েছে। বাংলাদেশের শিল্পখাতে নিযোতি মোট শ্রমশক্তির ৭৮ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নিযোজিত। দেশের র্শিপায়ন প্রক্রিয়াকে অধিকতর শক্তিশালি করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অগ্রাধিকার খাত এবং শিল্পডয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।


পঞ্চম অধ্যায়

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহঃ

বাংলাদেশ শিল্পে অনগ্রসর। আমাদের জাতয়ি আয়ে শিল্পের অবদান বিশ্বের অন্যতম দেশের তুলনায় অনেক কম। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির বার্ষিক গড় হার মাত্র ৩.৪ লতাংশ। বাংলাদেশের শিল্পখাত কতিপয সম্যা ও প্রতিবন্ধকতরা সম্মুখীন। নিম্নে বাংলাদেশের শিল্পখাতের বিদ্যমান সমমস্যা সমুহ আলোচনা করা হলো-

১.     ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ ঃ

বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের অন্যতম সমস্যা হল ঔপনিবেশিক সরকারের অবহেলা। প্রায় দু’বছরের ব্রিটিশ শাসন-শোষণ এবং ২৫ বছরের পাকিস্তানীদের শাসন শোষণের ফরে বাংলাদেশের শিল্পায়ন বাধা গ্রস্ত হয়্ অর্থাৎ ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী বিশেষত ব্রিটিশরা কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বে, বিশাখাপত্তন প্রভৃতি স্থানে এবং পাকিস্তানীরা করাচীতে শিল্প স্থাপন করলেও বাংলাদেশে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে নাই। যা বাংলাদেশের শিল্পায়নে বাধা হিসেবে চিহ্নিত ।


২.     প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবঃ

বাংলাদেশে শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের  অভাব লক্ষণীয়। বাংলাদেশের জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় কম। তাছাড়া দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের জনগণের আয় ও স্ঞ্চয় প্রবণতা কম হওয়ায় এখানে পুঁজি গড়ে উঠে না, যা শিল্পায়নের বাধা সৃষ্টি কর্।ে কেননা বৃহৎ শিল্প স্থাপনের জন্য যে পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন তা ব্যক্তি মালিকানায় সম্ভব নয়।

৩.    উদ্যোক্তার অভাবঃ

কোন দেশে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা ও শিল্পের বিকাশের জন্য দক্ষ উদ্যোক্তার প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাগণ উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ কররে শিল্পায়নের পথ প্রশস্ত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দক্ষ শিল্প উদ্যোক্তার অভাবে পুঁজি থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে অনেক উদ্যোক্তা শিল্প স্থাপন করতে চায় না যা শিল্পায়নের পথে একটি অন্যতম বাধা।

৪.     যন্ত্রপাতির অভাব ঃ

শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি। শিল্প কারখানায় ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমাদেরকে বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়্ কিন্তু এসব মূলধনী যন্ত্রপাতি আমাদনি জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা আমাদের নেই। প্রয়োজনীয় অর্থ ও যন্ত্রপাতির অভাবে বাংলাদেশের শিল্পায়ন ব্যাহত হয়।

৫.    শক্তির সম্পদের অভাব ঃ

শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ গ্যাস, কয়লাসহ অন্যান্য শক্তি সম্পদের। কিন্তু বাংলাদেশে শক্তি সম্পদের অভাব লক্ষণীয়। শিল্পায়নের জন্য যে, পরিমাণ বিদ্যুৎ ও গ্যাস প্রয়োজন তা বাংলঅদেশে নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৫ হাজার ২শ মেগাওয়াট হলেও উৎপাদন রয়েছে মাত্র ৩৮০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের ন্যায় অন্রান্য শক্তি সম্পদের অভাবেও বাংলাদেশের শিল্পায়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

৬.     দূর্বল অবকাঠামো ঃ

বাংলাদেশের শিল্পায়নের উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল দুর্বল অবকাঠামো। শিল্পায়নের জন্য পরিবহন, যোগাযোগ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, প্রভৃতি উপাদান প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্বর অবকাঠামো শিলআয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।

৭.    আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ঃ

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাংলাদেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধা হিসেবে চিহ্নিত শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় উপাকরণ বা যন্ত্রপাতি আমাদানির ক্ষেত্রে শিল্প উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন আমরাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। ঠলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে উদ্যোক্তাগণ দুর্নীতির আম্রয় নেন কিংবা মানসিকভাবে শিল্প স্থাপনের নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন যা শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি করে।

৮.    দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব ঃ

শিল্পায়নের জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনা আবশ্যক। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিচলানার উপর প্রতিষ্ঠানের ভালো মন্দ নির্ভরশীল। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব এবং অনিয়ম ও দূণীতির কারণে অনেক শিল।প প্রতিষ্ঠান চরম বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে।


৯.     দক্ষ শ্রমিকের অভাব ঃ

বাংলাদেশে শিল্প ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হল দক্ষ শ্রমিকের অভাব। বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং তাদের উৎপাদন ক্সমতা তুলনামূলক অনেক কম। উৎপাদনের অন্যতম হাতিয়ার দক্ষ শ্রমিকের অভাবে বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

১০.    প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের অভাব ঃ

বর্তমানে আধনিক প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব। বাংলাদেশের এখনো প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটেনি। শিল্পায়ন এবং শিল্পোন্নয়নের জন্য ব্যাপক হারে প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের প্রসার ঘটানো জুরুরি।


১১.  অনুন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ

শিল্পায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হল একটি উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। শিল্পের কাঁচামাল আনয়ন, শিল্পজাত পণ্যের বাজার জাতকরণ, ম্রমিকের অবাধ অভাধ যাতায়অত, প্রর্ভতির জন্য উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা একান্ত আবশ্যক। তাছাড়া বাংলাদেশের শিল্পজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করার জন্য নৌ ও বিমান বন্দরের অপর্যাপ্ততা শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করে।


১২. বৈদেশিক মুদ্রার অভাব ঃ

বাংলাদেশের শিল্পে অনগ্রসরতার অন্যতম কারণ হল বৈদেশিক মুদ্রার অভাব। শিল্পের যন্ত্রপাতি, কলকজা ও প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব রয়েছে যা শিল্পায়নকে ব্যাহত করছে।


১৩.    সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ঃ

দেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের শিল্পায়নের জন্য যুগোপযোগী ও শিল্পবান্ধ পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। স্বাধীনতার পর অর্থনেতিক নীতি হিসেবে সমাজন্তান্ত্রিক নীতি অনুসৃৃত হলেও ১৯৭৫ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে এ নীতির পরিবর্তে মুক্তবাজাপর নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ শিল্পনিিতর কারণে পুঁজি বিনিয়োগ ব্যাহত হয় যা শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্থ করে।

১৪. শ্রমিক অসন্তোষ ঃ

বাংলাদেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষ অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত। স্বল্প মজুরি, কর্মঘন্টা, কর্ম পরিবেশ, শ্রমিকের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয় যা শিল্প উৎপাদন ব্যাহত করে।

১৫.         কাঁচামাল রপ্তানির অভাব ঃ

বাংলাদেশের শিল্পের অনগ্রসতরার অন্যতম কারণ অধিক পরিমাণে কাঁচামাল রপ্তানির প্রবণতা। বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁচাপাট, চামড়া প্রভৃতি শিল্পজাত কাঁচামালের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় এসব কাঁচামাল বিদেশে রপ্তানি করা কাঁচামাল অভাবে শিল্পের উৎপাদন ব্যহত হয়।

১৬. শুল্ক বাধা ঃ

বাংলাদেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে শুল্ক সংক্রান্ত বাধা অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত । শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেতে সম্পূরক শুল্ক, উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক এবং শুল্ক পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম ও জটিলতা বাংলাদেশের শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

১৭.   রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঃ

দেশের দ্রুত শিল্পায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত  হল রাজনৈতিক   স্থিতিশীলতা। কিন্তু বাংলাদেশে হরতাল, অবরোধ ধর্মঘট প্রভৃতি রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি করে। কেননা বাংলাদেশে ১ দিনে হরতার ক্ষরি পরিমাণ প্রায় ৩৮৬ কেটি টাকা। বিগত ১৫ বছরে (১৯৯১ থেকে ২০০৬) বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ দিন হরতাল হয়েছে এবং এ হরতারে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০৮৮ কোটি টাকা।

উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষপটে বলা যায়, নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা বাংলাদেশের শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিশ্বায়নের এ যুগে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে হলে শিল্পায়নের কোন বিকল্প নেই।                  


ষষ্ঠ অধ্যায়

বাংলাদেশে শিল্পায়নের উপায়ঃ

বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে নানা সমস্যা বিরাজমান। দেশের শিল্পায়নের দ্রুততর করতে হলে চিহ্নিত সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। নিম্নে বাংলাদেশে শিল্পায়নের উপায় সমূহ আলোচনা করা হল-

১.     সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ঃ

বাংলাদেশের শিল্পায়নকে দ্রুততর করতে হলে শিল্পখাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত জরুরি। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লখ্যে সরকারি উদ্যোগে ছোট বড় শিল্প কারখানা স্থাপন, বিদ্যমান শিল্পের সম্প্রসারণ, রুগ্ন শিল্পকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে সচল করা একান্ত জরুরি।

২.     বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দান ঃ

দেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান করা জরুরি। সহজ শর্তে ঋণদান, কর মওকুফ, শিল্পজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা ও শুল্ক সুবিধা প্রদান, বিনিয়োগের উৎসাহিত করার জন্য সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শিল্পায়নকে দ্রুততর করা যায়।


৩.    মূলধন গঠন ও পুঁজি সরবরাহ ঃ

দেশের শিল্পায়নের জন্য মূলধন গঠনের প্রবণতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এজন্য জনগণ সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে হবে। তাছাড়া শিল্পখাতে পুঁজি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হলে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি ও ঋণের উচ্চ সুদের হার কমাতে হবে। উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত মূলধনের যোগান দেয়ার পাশাপাশি ঋণ তদারকি সম্ভব হলে শিল্পায়ন দ্রুততর হবে।

৪.     শক্তি সম্পদের উন্নয়নঃ

বাংলাদেশের শিল্পায়ন দ্রুততর করহে হলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, কয়লা, তেল প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কেননা শক্তি সম্পদ ব্যতীত শিল্পায়ন সম্ভব নয়। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন গ্যাস, কয়লা ও তেল ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে হবে।

৫.    শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি ঃ

বাংলাদেশের শিল্পায়নকে তরান্বিত করতে হলে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, নতুন যন্ত্রপাতি ও কৌশলের সাথে পরিচিত করানো জরুরি।

 ৬.     কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঃ

শিল্পায়নের জন্য কারিগরে শিক্ষায় শিক্ষিত জনসম্পদ প্রয়োজন। কারিগরি শিক্ষর প্রসার ঘটাতে হলে অধিক সংখ্যক কারিগরি বিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কৃষি কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডে শিল্প উপযোগী শ্রমিক তৈরি করতে হবে।

৭.    মূলধনী দ্রব্য আমদানি ঃ

দেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য যন্ত্রপাতি ও মূলধনী দ্রব্য আমদানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।  অপ্রয়োজনীয় বিলাস দ্রব্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, মলধনী দ্রব্য এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে।

৮.    পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নঃ

শিল্পায়নের জন্র পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে শিল্পের কাাঁচামাল  ও শিল্পজাত পণ্য এবং শ্রমিক সহজেই দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিলত করা যাবে যা শিল্পায়নকে তরান্বিত করবে।


সম্পূর্ণটি পেতে-০১৭৩৭৭৩১০৮৫



0 comments:

Post a Comment